আমি আরবের এক কবির কথা বলছি । তখন তার টগবগে তারুণ্য উজিয়ে পড়ছিল । টইটম্বুর তারুণ্যের হেফাজতের ভাবনা তার অনেক কবিতা ও সাহিত্য রসে ভরে ওঠে । কিন্তু বিয়ে বলে কথা ! ভাবলেই কি আর বিয়ে করা যায় ? বিয়ের জন্য দরকার অনেক কিছু । আবার উপযুক্ত পাত্রীই বা পাবে কোথায় ? এদিকে যৌবনের তর সইছে না । তার যৌবন নদীতে যে ভরা জোয়ার । তিনি কবিতার ছন্দে খুঁজে পান নিজের ব্যতিক্রমিতা । তার রচিত সাহিত্যে ঝরে পড়তে থাকে অজানা রস , অচিন জাদু । এরই মধ্যে তার কবিমনের সামনে বাঁকা চাঁদের মতােই উকি দেয় এক ছিপছিপে গড়নের যুবতি । এক মার্কেটে তার চোখে ধরা পড়ে সেই দুধে আলতা গণ্ডালােক । রক্তিম চেহারা । টসটসে ভরা যৌবন । তার কোমর দোলা হাঁটার মাঝে কবিতার ছন্দ খুঁজে পান কবি । ব্যাস ! আর যান কোথায় ! তিনি যুবতির প্রেমে পড়ে যান । কিন্তু আরব্য নারীরা যে ওপেন চলাফেরা করেন না । কী করে মনের ইচ্ছা পুরিয়ে দেখবেন তাকে ? তিনি নানা ছুতাে খুঁজতে থাকেন । মিছে কেনাকাটার অজুহাতে তরুণীর কাছে ঘেঁষার চেষ্টা চালান । কিছুটা সফলও হন । আরব্য যুবক কবি মুহূর্তে দক্ষ কাস্টমার বনে যান । ঐ যুবতি যেই দোকানে প্রবেশ করে , কবি সাহেবও পৌঁছেন সেই দোকানে । কালাে বােরকার আস্তিন হতে বেরিয়ে আসা রমণীর হাতের তালু আর কজি নজর কাড়ে তার । ব্যাস, এতটুকুতেই তার মাথায় চক্কর লেগে যায় । উদ্বেগ আর প্রেম - ভালােবাসায় হৃদয় হয়ে পড়ে অস্থির ও ব্যাকুল । সে তার প্রেমে পড়ে যায় । শুরু হয় ভালােবাসা । কিন্তু সেটি একতরফা ভালােবাসা । তবু তাতেই তার জবান দিয়ে ঝংকৃত হতে থাকে উচ্ছ্বসিত গীতছন্দ । কাব্যের ফুল ঝরতে থাকে দিনকয়েক। যুবতি তার অভিভাবকসহ কেনাকাটা শেষ করে গাড়িতে চেপে বসে । কিন্তু তরুণ কবির কি আর হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার সময় আছে ? তার যে আর তর সইছে না । ব্যাস , তিনিও একদেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়া যুবতির বাসার ঠিকানা সংগ্রহের মানসে গাড়ি ফলাে করে পেছনে পেছনে নিজ গাড়ি চালাতে থাকেন । অবশেষে অন্তত এই ধাপে তিনি সফল হন । চুপিসারে দূরে দাঁড়িয়ে বাসার ঠিকানা কালেকশন করেন । এবার কবির নাওয়া খাওয়া বাদ যাওয়ার উপক্রম । কেমন যেন উন্মাদ ভাব তার দেহ জুড়ে । কাজকর্মে তার মন বসে না । কারণ অপরূপাকে যে তার চাই-ই-চাই । কিন্তুু এত সহজেই কি সােনার হরিণ বাগে আসে? তিনি তাকে পাওয়ার নানা ফন্দি আঁটতে থাকেন । কী হারিয়ে ফেলেছেন - এমন ভাব তাৱ আপাদমস্তকে । তিনি মনের গহিনে এক মহাসিংহাসন রচনা করেন ঐ যুবতির জন্য । গড়ে তােলেন অপরূপ তাজমহল । ‘প্রচেষ্টা সাফল্য আনে পূণ্য আনে ধন ' প্রবাদ যুবক কবির ক্ষেত্রে বাস্তব হয়ে ধরা দেয় । তিনি নিরাশার ছাই ঝেড়ে ফেলে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন । যুবতি যুবক কবির ভালােবাসার কথা না জানলেও কবি স্বপ্নের প্রেয়সীর ভালোবাসার জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন । একপাক্ষিক ভালােবাসার জানা অজানা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিতে গত হয় তার দিন , সপ্তাহ , মাস , বছর । একেকটি মুহূর্ত তার কাছে মনে হয় যেন একেক যুগ । এভাবেই পরিষ্কার হতে থাকে তার বেদনার নীল আকাশ । তিনি স্বপ্নে বীজ বুনেন লাভ ম্যারেজ তথা ভালােবেসে ঘর বাধাঁর । কিন্তু কিভাবে পাঠাবেন বিয়ের প্রস্তাব ! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তার আর তর তীবের দেখা পায় । তার নিরন্তর প্রচেষ্টা তাকে নিরাশ করেনি । সফলত তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে । ভালােবাসার আকাশ হতে সরে যেতে থাকে উড়ে বেড়ানাে কালো মেঘগুলাে । তার সামনে ভেসে ওঠে কুরআন মাজিদের চিরন্তন বাণী : সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২৩৫ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِۦ مِنْ خِطْبَةِ ٱلنِّسَآءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِىٓ أَنفُسِكُمْ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّآ أَن تَقُولُوا۟ قَوْلًا مَّعْرُوفًا وَلَا تَعْزِمُوا۟ عُقْدَةَ ٱلنِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ ٱلْكِتَٰبُ أَجَلَهُۥ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِىٓ أَنفُسِكُمْ فَٱحْذَرُوهُ وَٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ অর্থঃ আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছা করো না। আর একথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাঁকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্য্যশীল। কুরআন মাজিদের এ আয়াত যুবকের মনে শতগুণে সাহস বাড়িয়ে দেয় । এক পর্যায়ে তিনি সাহস করে প্রস্তাব পাঠান বিয়ের । কবি যুবতিকে তার মনের কথা খুলে বলেন । কবি ছিলেন স্মার্ট চেহারার । শিক্ষাগত যােগ্যতাও সর্বোচ্চ ডিগ্রি । আর চলাফেরা , আদর্শও মন্দ নয় । ফলে যুবতিরও মনে ধরে তাকে । তার ইচ্ছেনদীতে তরতরিয়ে জোয়ার আসে । তিনিও যেন এতদিন এমন একটি প্রস্তাবেরই অপেক্ষা করছিলেন । যুবতির ইচ্ছায় তার অভিভাবকগণ কবি পরিবারের খোঁজখবর নেন । অবশেষে সফল হয় ‘ লাভ ম্যারেজ ' । প্রিয় পাঠক ! একবার ভেবে দেখেছেন কি যুবতিকে একবার দেখেই সাহিত্যজগতের কবি কেন তার প্রেমে মাতাল হয়ে গেলেন ? এর কারণ হলাে , আরবের রমণীরা মানুষের অগােচরে থাকে । মুক্তা যেমন লুকিয়ে লুকিয়ে নজরের আড়ালে থেকে দামি হয় , ঠিক তেমনি বিপরীতে পাশ্চাত্যের নারীদের সমুদ্রতীরে , বাজারে - বন্দরে সবখানে দেখা যায় । ফলে তাদের পায়ের গােছা দেখেও মানুষ উত্তেজিত হয় না , হৃদয় দুলে ওঠে না । এতে তারা লজ্জাবােধও করে না । রমণীর পায়ের গােছা , চেয়ারের পায়া এবং ঘরের কাঠ সবই তাদের কাছে সমান হয়ে পড়েছে । ফলে তাদের সমাজে বৈবাহিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে । বৈবাহিক সম্পর্ক হলাে স্থায়ী বন্ধন । এর মাধ্যমে একজন পুরুষ স্বাধীন রুচিবােধের সাথে যুক্ত হয় এবং মানসিক চাহিদা পূরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে । কিন্তু এ চাহিদা যদি ভিন্নপথে অর্জিত হয় , তাহলে আর বিবাহের মৌলিক প্রয়ােজনীয়তা থাকল কোথায় ? সৌন্দর্য প্রদর্শন করা ও পর্দাহীনতা ইহুদিদের মজ্জাগত অভ্যাস । নারীর ফেতনা দ্বারা কোনাে জাতিকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র ও কৌশল সফলতার দাবিদার । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , অতীতে উলঙ্গ নারীরাই ছিল তাদের বিভিন্ন সংস্থা ও কার্যক্রমের বড় হাতিয়ার । ইহুদিরা এ বিষয়ে প্রাচীন ও অভিজ্ঞ । এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘােষণা করেনঃ- তােমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং ভয় কর নারীকে । কারণ , বনি ইসর প্রথম ফেতনা ছিল নারীর ফেতনা । ( মুসলিম শরীফ ) সিফরে আশিয়া কিতাবের তৃতীয় সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে যে , আল তায়ালা ছিহয়ুন গােত্রের মেয়েদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের কারণে শাস্তি প্রদান করেন । পরিতাপের বিষয় হলাে , পশ্চিমা নারীরা নিজেরাই নিজেদের সম্মান হারিয়ে ফেলেছে । এখন তাদের ভরণপােষণ পর্যন্ত দেয়ার মতাে কেউ নেই । এ কারণে তারা বাধ্য হয়ে জীবনধারণের জন্যে কোনাে না কোনাে পেশা বেছে নিচ্ছে । কলকারখানার শ্রমিক হওয়া , হাটেবাজারে শ্রম দেয়া এবং রাস্তাঘাট ঝাড় দেয়াসহ সব ধরনের কাজে অবাধে অংশগ্রহণ করছে । ইউরােপের নারীরা টয়লেট পর্যন্ত পরিষ্কার করে দিচ্ছে । ইউরােপে এমন অনেক তরুণী - যুবতি নারী আছে , যারা জুতা সেলাই করে , জুতা কালি করার বাক্স কাধে রাখে । এমনও কাউকে দেখা যায় যে , সে বই হাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে ; ঠিক এরই মধ্যে কোনাে সাহেব পা বাড়িয়ে দিলেন জুতা কালি করার জন্যে । ব্যাস ! পাশ্চাত্য - কন্যা মাথা নিচু করে জুতা কালিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । ইউরােপের এই হলাে সামাজিক ব্যবস্থা । অথচ ঠিক একই মুহূর্তে প্রাচ্যের নারীরা নিজ নিজ ঘরে স্বামীর পাশে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করছে । আর তা দেখেই হিংসায় কলজে ফেটে মরে হায়েনা আর নির্লজ্জ পশুর মতাে কিছু মানুষ নামের অমানুষ । ইসলামের চিরন্তন বিধানের মধ্যেই রয়েছে নারীর মর্যাদা । এ বিধান মেনে নিলেই তাদের মধ্যে স্মার্টনেস খুঁজে পাওয়া যায় । এ বিধানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে তাদের আসল মূল্য । যে নারী নিজের সৌন্দর্য লুকিয়ে রেখে চলে সে দামি সােনার মতােই অন্যের চোখে ধরা দেয় । আদর্শ যুবতীর পেছনেই শিক্ষিত ও যােগ্য কবির ন্যায় হাজারাে যােগ্য পুরুষ ঘুরঘুর করতে থাকে । অনাদর্শ তরুণীকে টিস্যু পেপারের মতাে ব্যবহারের পর ছুড়ে ফেলে দিলেও প্রকৃত আদর্শ নারীকে নিয়েই ঘর বাঁধতে চায় সকল পুরুষরা । এসব যুবক একজন আদর্শ জীবনসঙ্গিনী খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় । তাদেরকে মর্যাদার আসনে রেখে তাদের সাথে ‘ লাভ ম্যারেজ ' এ আবদ্ধ হওয়াকে নিজের জীবনের বড় পাওনা মনে করে থাকে ।
1 Comments
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete