অক্টোপাস প্রানীটির নাম কারো অজানা নয়। রহস্যঘেরা সমুদ্রের বিচিত্রসব প্রাণির মধ্যে অক্টোপাস অন্যতম। অমেরুদন্ডী প্রাণিদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচনা করা প্রাণিটি আট বাহুবিশিষ্ট সামুদ্রিক দানব/সামুদ্রিক শয়তান নামেই পৌরানিক কাহিনীতে প্রচলিত আছে । এদের দেহের অনন্য গঠনের জন্য প্রানীজগতের একটি চিত্তাকর্ষক জীব বলে আখ্যায়িত করা হয়। উচ্চশ্রেনীর এই অমেরুদন্ডী প্রাণিটির বুদ্ধিমত্তা এবং অভিযোজন ক্ষমতার জন্য সমুদ্রের একচ্ছত্র অধিপত্ত বিস্তার লাভ করেছে । এ পর্যন্ত অক্টোপাসের ৩০০ এর অধিক প্রজাতি পাওয়া গেছে বলে গবেষকদের ধারণা । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সংখ্যাটা আরো অনেক বেশী হতে পারে। হয়তবা আরো প্রজাতি আছে যেগুলো এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত করা যায়নি ।
শারীরিক গঠনঃ
একেক রকম প্রজাতির অক্টোপাসের একেক রকম শারীরিক বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে সাধারনত অক্টোপাসের ওজন ১০ কেজির মত হয় থাকে এবং লম্বায় প্রায় ৪.৫ ফুট পর্যন্ত হয়। তবে এশিয়ার প্যাসিফিক অঞ্চলের দৈত্যাকার অক্টোপাসের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমি শারীরিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে । সবচেয়ে বড় প্রজাতির এই অক্টোপাসটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফুট লম্বা হয় এবং ওজনে প্রায় ২৭৫ কেজি হয়। অক্টোপাসের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য মধ্যে হল ;এদের রক্ত নীল, তিনটি হৃদপিন্ড এবং নয়টি মগজ আছে যা অন্যন্যা প্রাণীদের থেকে এদের পৃথক করে রাখে । প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং চিত্তাকর্ষক অভিযোজন ক্ষমতার কারনে, বিজ্ঞানীদের কাছে অক্টোপাস রিসার্চের বিষয়।এটি নিয়ে গবেষকরা ব্যাপক গবেষনা করেছে । যদিও অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে যে অক্টোপাস দ্বারা অনেক মানুষ নিহত হয়েছে তবে এদের মধ্যে নীল রিং যুক্ত অক্টোপাস গুলো মানুষের জন্য খুবই বিপদজনক।
আবাসস্থলঃ
অক্টোপাসরা শুধুমাত্র সমুদ্রেই বসবাস করে যেহেতু তাঁদের বেচে থাকার জন্য লবণাক্ত জলের প্রয়োজন হয়।যদিও কিছু কিছু অক্টেপাস অগভীর অংশে বসবাস করে, তবে অধিকাংশ অক্টোপাসরা সাধারনত সমুদ্রের তলায় বসবাস করে। অক্টোপাসদের একটি বৈশিষ্ট্য হল যে এরা কোনো একটি নির্দিষ্ট এরিয়াতে অনেকদিন অবস্থান করে না। ১০/১৫ দিন পর পর এরা জায়গা বদল করে। মূলত শিকারি প্রাণিদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এরা এমনটা করে। সমুদ্রের তলায় যেখানে কোরাল রিফ অথবা পাথর আছে সেসব জায়গাতেই এদের বিস্তার বেশি। এরা বিভিন্ন তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে সক্ষম। এটা পর্যবেক্ষিত হয়েছে যে,যেসব অক্টোপাসের প্রজাতি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে বসবাস করে তারা ঠান্ডা অঞ্চলে বসবাসকারী প্রজাতির থেকে কিছুটা ছোট হয়। এরা সমুদ্রের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অভিযোজন করতে পারে, সে কারণে এরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এখনো পর্যন্ত ঠিকে আছে ।
অভিযোজন ক্ষমতাঃ
অভিযোজন হচ্ছে এমন একটি জৈব প্রক্রিয়া যা কোনো প্রাণিকে তার নিজস্ব পরিবেশে অথবা কোনো নতুন পরিবেশের মধ্যে টিকে থাকতে সহায়তা করে। এটা প্রাণিকূলের একটি বিশেষ ক্ষমতা যার মাধ্যমে নিজেরা নিজেদেরকে রক্ষাও করে। চোখঃ যদিও এরা শব্দ উৎপন্ন করতে পারে না কিংবা শব্দ শুনতে পারে না তবুও এই নির্জন ভয়ংকর প্রানিটির প্রখর দৃষ্টিশক্তি রয়েছে। অত্যন্ত সংবেদনশীল চোখের সাহায্যে এরা সাহায্যে সমুদ্রের অন্যান্য ভয়াল প্রতিকূলতার মাঝেও ঠিকে থাকে।
বাহু প্রতিস্থাপনঃ কোনো কারণে শিকারির দ্বারা অক্টোপাসের কোনো বাহু বিনষ্ট হলে অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে, তাতেও এদের কোনো সমস্যা নেই। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, অক্টোপাস কোনো রকম স্থায়ী ক্ষতি ছাড়াই আরেকটি নতুন বাহুর পুনর্জন্ম দেওয়া তার সময়ের ব্যপার মাত্র। মস্তিষ্কঃ সৃষ্টির মধ্যে অক্টোপাস খুবই বুদ্ধিমান প্রাণি হিসেবে বিবেচিত। এদের স্বয়ংসম্পূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র বিদ্যমান।তাদের নয়টি মস্তিষ্ক রয়েছে যার মধ্যে একটি মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রন করে । অন্যদিকে বাকি আটটি ছোট ছোট মস্তিষ্ক আটটি শুড়ের জন্য। এর জন্য এদের প্রত্যেকটি বাহুই একে অন্যের সাথে স্বাধীনভাবে কাজ করে। সাকারঃ অক্টোপাসের আটটি শুড় আছে। প্রত্যেকটি শুড়ের মধ্যে ছোট ছোট কাপ আকৃতির কিছু সাদা অঙ্গ দেখা যায় যেগুলোকে সাকার বা চোষক বলা হয়। প্যাসিফিক অক্টোপাসের প্রতিটি বাহু ২৮০ টি সাকার ধারণ করে। এগুলো এদের দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ যার মাধ্যমে এরা স্পর্শ এবং স্বাদের অনুভূতি পায়। প্রতিটি সাকার খুবই স্পর্শকাতর হয় এবং হাজার হাজার কেমিক্যাল রিসেপ্টর ধারণ করে । সমুদ্রের তলায় কোনো কিছুর সাথে আটকে থাকতে এবং শিকারকে ধরার জন্যও অক্টোপাসের সাকার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে ।
হৃদপিন্ডঃ অক্টোপাসের তিনটি হৃদপিন্ড রয়েছে। বদ্ধ সংবহন প্রক্রিয়ায় অক্টোপাসের দেহে রক্ত বাহিত হয় । তিনটি হৃদপিন্ডের মধ্যে দুইটিই গিলে রক্ত পাম্প করে। এবং বাকি হৃদপিন্ডটি অক্টোপাসের সমগ্র দেহে রক্ত পাম্প করে। অক্টোপাসের রক্তে হিমোসায়ানিন নামক যৌগ অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।
সক্ষমতাঃ
অক্টোপাসরা অনেকটাই শক্তিশালি প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা নিজের দেহের ওজনের কয়েক গুন ওজনের ভার অনায়েসেই বহন করতে পারে ।
কি খায় এরা?
নিশাচর হওয়ায় শুধুমাত্র রাতের বেলায় শিকার সন্ধানের উদ্দেশ্যে হণ্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। তবে বেশি ক্ষুধার্ত হলে দিনেও শিকার করতে দেখা যায়। অন্ধকারে এরা ভালো দেখতে পায়।এ সুযোগটাই এরা শিকারের কাছ থেকে নিয়ে থাকে। অক্টোপাস মূলত মাংশাসী প্রাণি। এরা প্রধানত মাছ,শামুক,মলাস্কা, ক্রাস্টাসিয়ান জাতীয় প্রাণীগুলোকে ভক্ষণ করে থাকে। কিন্তুু যখন খাদ্যের সংকট দেখা দেয় তখন এরা নিজেদের থেকে ছোট প্রজাতির অক্টোপাসদেরকেও খেয়ে ফেলে। শিকার ধরার জন্য এরা বাহুতে থাকা সাকার বা চোষক কাপ গুলোকে ব্যাবহার করে। যখন এরা শিকারকে কামড় দেয় তখন একপ্রকার বিষ নিঃসৃত হয়। এটি শিকারকে অবশ করে ফেলে।
বাঁচে কত দিন?
অন্যন্যা প্রাণীর তুলনায় এরা খুবই ক্ষনস্থায়ী জীবন পরিচালনা করে। এদের জীবনকাল ছয়মাসের বেশি নয়। তবে উত্তর প্যাসিফিক অঞ্চলের দৈত্যাকার অক্টোপাস ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।পুরুষ অক্টোপাস প্রজননে অংশগ্রহন করার কিছুদিন পর মারা যায়। অন্যদিকে স্ত্রী অক্টোপাস শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
অক্টোপাসের বুদ্ধিমত্তাঃ
এটা অনেকটা বিস্মিত হবার মত বিষয় যে অক্টোপাস বুদ্ধিমত্তার দিক থকে অন্যন্যা প্রাণিদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে। এরা এই জন্য আকর্ষনীয় কারণ তারা কার্যকরভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে । সবথেকে বড় বিষয় হল তারা কোনো স্মৃতিকে অনেকদিন পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। সেটা ক্ষণস্থায়ী কিংবা দীর্ঘস্থায়ী হউক। সুতরাং তারা এটা খুব ভালো করেই মনে রাখে যে,কোথায় পর্যাপ্ত খাদ্য পাওয়া যায় এবং কোথায় শত্রুদের আনাগোনা বেশী। এবং সে অনুযায়ী তাদের কার্যকলাপ সম্পাদন করা। বন্দীদশা থেকে পালানোর ব্যাপারে অক্টোপাস বহুল আলোচিত।খুব অল্প জায়গার মধ্যদিয়ে এরা তাদের পুরো শরীর প্রবেশ করাতে সক্ষম। এরা বিভিন্ন প্যাটার্ন ধারন ,আকার আকৃতি পরিবর্তন, এমনকি রং পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরনস্বরূপ মিমিক অক্টোপাস পানিতে বসবাসকারী প্রায় ১৫ টি প্রাণির আচরণ নকল করতে পারে । এমনটা তারা করে প্রধানত দুটি কারণে প্রথমত শিকারীকে দ্বিধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে, দ্বিতীয়ত যাতে করে তারা সহজেই তাদের শিকারকে কাবু করতে পারে। এরা বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন, যেমন কোনো কঠিন সমস্যার সমাধান, বয়ামের মুখ খোলা, বাঁধন খোলা,এবং অ্যাকুরিয়াম থেকে পালাতে পারদর্শি।
কোনো কারনে অক্টোপাস শিকারীর হাত থেকে পালাতে ব্যর্থ হলে অথবা বন্দীদশা থেকে নিজেদেরকে বের করতে সক্ষম না হলে স্নায়বিক উত্তেজনার কারণে এরা অজ্ঞান হয়ে যায় অথবা নিজেই নিজের বাহুগুলোকে খেতে আরম্ভ করে।
আত্নরক্ষার কৌশলঃ
অক্টোপাসের শারীরিক গঠন অনন্য হওয়ার কারনে সমুদ্রের নানা প্রতিকুল পরিবেশে এরা বিভিন্ন উপায়ে নিজেদেরকে আত্নরক্ষা করে। সাধারণত বড় মাছ, কয়েক প্রজাতির তিমি, হাঙ্গর এগুলো অক্টোপাস শিকার করে বেড়ায় । শিকারির তাড়া খেয়ে এরা ঘন্টায় প্রায় ২৫ মাইল বেগে ছুটতে পারে।অন্যদিকে যদি পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব থাকে তবে, ইল ফিশ এবং ডলফিনও অক্টোপাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায় এবং তাদের শিকার করে। সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়া অক্টোপাসের তিন ভাগের দুই ভাগই শিকারের খাদ্যে পরিণত হয় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। যখন দুই লক্ষ বা তারো অধিক অক্টোপাস ডিম ফুটে বের হয়, তখন শুধুমাত্র একটি সিঙ্গেল শিকারী মিনিটের মধ্যেই কয়েকশ থেকে হাজারের মত শাবক ভক্ষন করে থাকে। মূলত তাদের এই নিম্নমানের ঠিকে থাকার ক্ষমতার জন্যই স্ত্রী অক্টোপাস অনেক ডিম পাড়ে। যাইহোক গুটিকয়েক ঠিকে থাকা শাবকগুলো বড় হয়ে আত্নরক্ষার বিচিএ এবং বিস্ময়কর পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, যা অন্যকোনো প্রাণিতে দৃশ্যমান নয়। তেমন কিছু চিত্তাকর্ষক আত্নরক্ষার কৌশল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলঃ কালি নিক্ষেপঃ অক্টোপাসের দেহের বিশেষ গ্রন্থি থেকে এক ধরনের ঘন কালো কালি নির্গত হয় যা তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিকূলতায় আত্নরক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়। যখন তারা কোনো শঙ্খাযুক্ত পরিস্থিতি কিংবা কোনো শিকারী প্রাণির উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে তখন তারা তাদের চারপাশে এই অদ্ভুত কালো কালিটি নিক্ষেপ করে দেয় । এতে করে শিকারী প্রাণিটি কিছু দেখতে পায়না এবং সেই কালির প্রভাবে কিছু সময়ের জন্য শিকারীর ঘ্রান শক্তিও বিকল হয়ে যায়। এবং এই সুযোগে অক্টোপাসটি উদাও হয়ে যায়,যেমনটা জাদুকর কোনো কিছুকে অদৃশ্য করে দেয়। ছদ্মবেশীঃ অক্টোপাসকে ছদ্মবেশী প্রাণি হিসেবে বিবেচিত করা হয়। অক্টোপাসের দেহত্বকের নিচে ক্রোমাটোফোর নামক বিশেষায়িত কোষ বিভিন্ন ধরনের রং নির্গত করে। এর ফলে এরা ইচ্ছামত রং পাল্টানোর মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারন করতে পারে। এটি প্রতিকূল পরিবেশে তাদের ত্বকের রং পরিবর্তন করার মাধ্যমে চারপাশের সাথে মিশে যায়।দ্রুত রং পরিবর্তনের মাধ্যমে এরা সমুদ্রতলের বালি, পাথর, উদ্ভিদ ইত্যাদির সাথে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে শিকারীরা তাদের খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও এদের শনাক্ত করতে পারে না। মিমিক অক্টোপাস স্টার ফিস,ইল ফিশ সহ প্রায় ১৫ টি প্রাণির আচরন হুবহু নকল করতে পারে, তাদের মত আকৃতি তৈরী করতে পারে, তাদের মত একই রং এ রূপান্তরিত হতে পারে। এতে করে তারা নিজেদেরকে আত্নরক্ষা করে। অন্যদিকে এরা এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব কাছ থেকেই শিকারকে অনায়েসে ধরতে পারে কোনোরূপ ঝামেলা ব্যাতিরেকে । এছাড়া দেহের বর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং শঙ্কাযুক্ত পরিস্থিতিতে অন্য অক্টোপাসদেরকেও সতর্ক করে দেয়। টক্সিক ক্ষরণঃ অক্টোপাসের কামড়ে শক্তিশালী বিষ থাকে। যখন তারা শিকার ধরে খায় তখন এই বিষের প্রভাবে শিকার অবশ হয়ে যায়। একপ্রকার অক্টেপাস আছে যাদের গায়ে ছোট ছোট নীল বৃত্ত দেখা যায়। এরা মানুষের জন্য খুব বিপদজনক। এরকম অক্টোপাসের বিষের প্রভাবে মিনিটের মধ্যেই ২৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
প্রজনন প্রক্রিয়াঃ
প্রজাতিভেদে অক্টোপাসের প্রজননকাল শুরু হয় কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর সময়ের মধ্যে। পুরুষ অক্টোপাসটি স্ত্রী অক্টোপাসের সাথে মিলিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়।পুরুষ অক্টোপাসের তৃতীয় বাহুটি প্রজনন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে এবং সেটির স্পার্ম থলে স্ত্রী অক্টোপাসের শরীরে প্রবেশ করে। ডিম পাড়ার আগ পর্যন্ত স্পার্ম গুলো স্ত্রী অক্টোপাসের দেহেই অবস্থান করে ।প্রজাতিভেদে একটি স্ত্রী অক্টোপাস প্রায় ১৫০০০০-২০০০০০ ডিম দিয়ে থাকে। এরপর স্ত্রী অক্টোপাসটি তার দেহে থাকা স্পার্ম গুলো ডিমের উপর ছড়িয়ে দেয়। ডিম ফুটতে প্রায় ২ থেকে ১০ মাসের মত সময় লাগে। ডিম পাড়া থেকে শুরু করে ডিম ফুটা পর্যন্ত স্ত্রী অক্টোপাসটি যাবতীয় খাদ্যগ্রহন থেকে বিরত থাকে। ফলে বাচ্চা ফুটার কিছুটা সময় পরেই স্ত্রী অক্টোপাসটিও মারা যায়। শুরুতে অক্টোপাস শাবকরা পানির উপরে অবস্থান করে এবং কয়েক মাস সময় লাগে পরিণত হয়ে সমুদ্রের তলায় ফিরে যেতে। পানির উপরে অবস্থানরত বাচ্চাগুলোর তিনভাগের দুই ভাগই শিকারির পেটে চলে যায় তাদের জন্মানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই। সৌভাগ্যক্রমে যেগুলো জীবিত থাকে সেগুলো প্লাকটন খেয়েই বেঁচে থাকে এবং দ্রুত বেড়ে উঠে । হিসাব করে দেখা গেছে যে, পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত এদের সমগ্র দেহের ৫% করে প্রতিদিন বৃদ্ধি পায়। প্রাপ্ত বয়স্ক অক্টোপাসরা সমুদ্রের তলায় ফিরে যায় শিকারের সন্ধানে। অন্যন্যা প্রাণিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ডিম দেওয়া অথবা বাচ্চা দেওয়ার আগে প্রচুর খাদ্য খেয়ে থাকে। কিন্তুু স্ত্রী অক্টোপাসের ক্ষেত্রে তা ব্যাতিক্রম। এরা ডিম পাড়া থেকে শুরু করে বাচ্চা ফুটার আগ পর্যন্ত কোনো খাদ্য গ্রহন করে না। এরা তাদের স্বল্প জীবণের একটা বিশাল সময় ডিম দেখাশুনা করা,এদের পরিষ্কার করা,শিকারীর হাত থেকে রক্ষা করা,পরিমিত তাপ প্রদান করা ইত্যাদির পিছনে ব্যয় করে। এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর নিজেদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
0 Comments