
নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আল্লাহকে বিশ্বাস করবো কেন?প্রাণসত্বা, চিন্তা, জ্ঞান, উপলদ্ধি,ক্ষুধা, ইথার, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, চুম্বকীয় বল, গ্রাভিটি,ইত্যাদি এসব কিছু তো দেখা যায়না। তবুও আমরা এগুলোকে বিশ্বাস করি।কিন্তু বিশ্বাস কেও তো দেখা যায়না তারপরেও কেন 'বিশ্বাসকে' না দেখেও বিশ্বাস করি? কেন করি..? তাহলে আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তাকে না দেখেও তাঁকে বিশ্বাস করা যাবেনা। কেন? এই অসীম এবং মহাবিস্ময়কর মহাবিশ্বে একজন মহাবিজ্ঞ এবং তাঁর মহাপরিকল্পনা ব্যতিরকে-সৃষ্টি বা চলতে পারে কী করে ?এবিষয়ে, নাস্তিক-সম্প্রদায়েরা কখনও গভীর ভাবে ভেবে দেখেছি কী ? স্রষ্টার বাণী কী মিথ্যা..? নাস্তিকরা সেগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছে কী..?না, পারেনি।। স্রষ্টাকে ইহজগতে সৃষ্টির চোখে দেখা যাবেনা আল্লাহর জাতকে (সিফাত) অন্তর্চক্ষু কাশফে এবং শরীরের চোখ দিয়ে কোনভাবেই দেখা সম্ভব নয় ! সে ক্ষমতা সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি ! কোন নবী ওলী মানুষ জিন ফেরেশতা আল্লাহর জাতকে(অন্তর্চক্ষু কাশফে এবং শরীরের চোখ দিয়ে )কোনভাবেই দেখতে পায় না।আল্লাহর জাত কোন পদার্থের তৈরী নয় । আল্লাহর জাত নূরের তৈরী না ।আল্লাহর জাতের হাত পা নেই ।আল্লাহর জাত স্থান কাল সময় এসব কিছুর উর্ধ্বে। আল্লাহর সমতুল্য কেউ নাই কিছু নাই । আমরা নামাযের সময় আল্লাহর জাতকে ইবাদত করি যাকে অন্তর্চক্ষু কাশফে এবং শরীরের চোখ দিয়ে দেখা যায় না। কোরআন বলছেঃ “কিছুই তার সদৃশ নয় । তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা ।“ (সূরা আশ শুরা আয়াত ১১) “দৃষ্টিসমূহ(কাশফের অন্তর্চক্ষু ,শরীরের চোখ ইত্যাদি )তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ।“(সূরা আনম আয়াত ১০৩) “কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়।“(সূরা আশ শুরা আয়াত ৫১) সূরা বাকারাঃ ৫৫, বলা হয়েছে 'মনে করে দেখো, যখন তোমরা বলেছিলে- “মুসা, আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে নিজের চোখে সামনাসামনি দেখছি।” ঠিক তখন তোমাদের উপরে বজ্রপাত হলো, যখন তোমরা স্পষ্ট ভাবে তাকিয়ে ছিলে।" বনী ইসরাইলের এই সমস্যাটা খুবই কমন সমস্যা এবং এখনকার নাস্তিকদেরও। যেটা অনেক মুসলিমের মধ্যেও আছে। তারা আল্লাহর প্রতি মোটামুটি বিশ্বাস রাখেন; কিন্তু ইসলামের বাধ্যতামূলক নিয়মগুলো যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া, রমযানে ত্রিশটা রোযা রাখা, প্রতি বছর যাকাত দেওয়া—এধরনের কাজগুলো করার মতো যথেষ্ট তাগিদ বা কারণ খুঁজে পান না। অনেকে আবার আল্লাহ যে সত্যিই আছেন এবং কু’রআন যে সত্যিই তাঁর বাণী—তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। বিশেষ করে যখন তার জীবনে কোনো বড় ধরনের সমস্যা শুরু হয় । বিংশ শতাব্দীর পর থেকে এই সমস্যাটা ইন্টারনেটের কারণে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকের কিশোর-তুরণরা পাশ্চাত্যের কার্টুন, চলচ্চিত্র আর ইন্টারনেটের বদৌলতে এমন সব লেখালেখি পড়ছে যেগুলো ধর্মীয় শিক্ষাকে ব্যাঙ্গ করে; আল্লাহ অস্তিত্বকে যুক্তির গোলকধাঁধাঁয় মিশিয়ে দিতে চায়। এগুলো পড়ে প্রথমত ধর্ম, নবী এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা যেমন পুরোপুরি চলে যাচ্ছে, একই সাথে তারা ডিসেন্সিটাইজড বা অনুভূতিহীন, ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে তখন যথেষ্ট যুক্তি দেখালেও কোনো লাভ হয় না। তারা তাদের বিভ্রান্তির গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতেই থাকে। কিন্তু অাল কোরঅান হলো অবিকৃত ও অটুট সংরক্ষিত। অাল্লাহর বাণী যেই কু’রআন তাকে কোনো ধরনের অন্যায় করতে বলে না, কোনো ভুল তথ্য দেয় না, তার ক্ষতি হবে এমন কিছু করতে কখনও বলে না ।সেই কু’রআন যখন তাকে বলে নামায পড়তে, রোজা রাখতে, যাকাত দিতে, সুদ না খেতে, ঘুষ না দিতে, রাস্তাঘাটে মাথা-ঘাড়-হাত বের করে অর্ধ-নগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা না করতে—তখন সে আর সেটাকে মেনে নিতে পারে না। তখনি তার একটা অলৌকিক কিছু দেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেই অভিশপ্ত ইহুদী জাতীর মত করে। এধরনের মানুষদের সমস্যাটা আসলে অলৌকিক কিছু দেখা নয়, এইধরনের মানুষের সমস্যা হচ্ছে পক্ষপাতহীনভাবে বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে নিজেকে পরিবর্তন করার সদিচ্ছার অভাব। এদের যদি সত্যিই ইচ্ছা থাকত, তাহলে এরা চিন্তা ভাবনা করে নিজেরাই বুঝতে পারত যে, কু’রআন সত্যিই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বাণী এবং একে আমাদের অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। তাদের তখন আর অলৌকিক কিছু দেখে নিজেকে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজন থাকত না। শুধুই প্রয়োজন কু’রআনকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো... যারা এখনও আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে ঠিক পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি, একধরনের দোটানার মধ্যে ঝুলে আছে, তাদেরকে আপনি যদি প্রশ্ন করেন-- “আপনি কেন বিশ্বাস করেন না যে, আল্লাহ সত্যিই আছেন?”তাহলে আপনি নিচের কোনো একটা উত্তর পাবেনঃ ১) আল্লাহ থাকতেও পারে, আবার নাও পারে, আমি ঠিক জানি না। যেহেতু আমি জানি না সে সত্যিই আছে কি না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই এবং আমি আমার ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করব। ২) আল্লাহ আছে কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব না, তাই আমি ধরে নিচ্ছি যে সে নেই, এবং আমি আমার মতো করে জীবন যাপন করব। উপরের উত্তর দুটি লক্ষ করলে দেখবেন, সে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিচ্ছে ‘আল্লাহ নেই’-কে। সে কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’—এটা ধরে নিতে রাজি হচ্ছে না। সে যদি সত্যিই নিরপেক্ষ হয়, তাহলে সে কেন নিচের উত্তরগুলোর একটা দিচ্ছে না। আল্লাহ আছেন কি নেই, সেটা বিজ্ঞান কখনই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করতে পারবে না। তাই আমি ধরে নিচ্ছি তিনি আছেন এবং আমি তাঁর আদেশ মতো জীবন পার করব। কিন্তু এই ধরনের উত্তর আপনি পাবেন না। বেশিরভাগ মানুষ ধরে নিবে আল্লাহ নেই, কারণ আল্লাহ আছেন ধরে নিলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে: নামায পড়তে হবে, রোযা রাখতে হবে, যাকাত দিতে হবে, হিন্দি সিরিয়াল এবং পর্ণ দেখা বন্ধ করতে হবে, ফেইসবুকে হাঁ করে অন্যের বেপর্দা ছবি দেখা বন্ধ করতে হবে—এগুলো করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তাহলে তাদের সাথে তর্ক করে শেষ পর্যন্ত কী লাভটা হচ্ছে। ধরুন,আপনি এদের কাউকে বললেন, “ভাই, আপনার কথা যদি সত্যি হয় যে, আল্লাহর অস্তিত্ব নেই, মৃত্যুর পরে কোনো জগত নেই, তাহলে আপনি যখন মারা যাবেন, তখন আপনার অস্তিত্ব শেষ। আপনি কোনোদিন জানতে পারবেন না যে, আপনার ধারণাটা সঠিক ছিল কিনা। কিন্তু ধরুন আপনি ভুল, আর মারা যাওয়ার পর দেখলেন, আল্লাহ সত্যিই আছেন। জাহান্নামের যেসব ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা পড়ে আপনি হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলো সব সত্যি ঘটনা। তখন কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?” এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া হবে “এরকম যুক্তি তো অনেক কিছুর বেলায়ই দেখানো যায়। তাই বলে কি ‘আল্লাহ আছেন’ ধরে নিয়ে আমাকে ইসলাম মানতে হবে নাকি? এটা কী রকম যুক্তি হলো ? অথচ ‘আল্লাহ নেই’, এটা ধরে নেওয়াটা তাদের জন্য ঠিকই যুক্তিযুক্ত। তাদের যুক্তি অনুসারে-আল্লাহ আছেন, নাকি নেই–সেটা ৫০-৫০ সম্ভাবনা..তারপরেও তারা ‘আল্লাহ নেই’ এটা ঠিকই মেনে নিতে রাজি, কিন্তু ‘আল্লাহ আছেন’ এটা মেনে নিতে রাজি না। নাস্তিক এবং অধার্মিকদের দেখানো জনপ্রিয় সব যুক্তি এবং প্রমাণগুলোর মধ্যে যে আসলে কত ফাঁকফোকর আছে, সেটা জানার জন্য এই তিনটি বই বেশ কাজের। ১) গণিতবিদ, ফিলসফার এবং বেস্ট সেলার ড: ডেভিড বারলিন্সকি-এর লেখা The Devil’s Delusion, ২) "আধুনিক নাস্তিকতার জনক’ নামে কুখ্যাত নাস্তিক ফিলসফার এনথনি ফ্লিউ-এর ৭০ বছর পর আস্তিক হয়ে যাওয়ার পরে লেখা There is a God , ৩) The Human Genome প্রজেক্টের প্রধান, বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানীদের একজন: ড: ফ্রান্সিস কলিন্স-এর লেখা The Language of God । শূন্য থেকে সৃষ্টিজগত তৈরি হওয়াটা যে যৌক্তিকভাবে হাস্যকর একটা তত্ত্ব, সেটা নিয়ে ড: ডেভিড বিস্তারিত যৌক্তিক প্রমাণ দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিভারস তত্ত্ব যে আসলে একটা পলিটিকাল কৌশল, যেখানে দুর্বোধ্য গণিতের আড়ালে নাস্তিকরা লুকিয়ে থেকে তাদের সেক্যুলার মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছে সেটা তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। DNA-তে ৩০০ কোটি অক্ষরে যে এক প্রচণ্ড সৃজনশীল এবং অকল্পনীয় জ্ঞানী সত্তার স্বাক্ষর স্পষ্টভাবে লেখা আছে, সেটা ড: ফ্রান্সিস সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন, যা আধুনিক নাস্তিকতার জনক এনথনি ফ্লিউকেও আস্তিক হতে বাধ্য করেছে। যারা রিচার্ড ডকিন্স নামে একজন বায়োলজিস্ট-এর লেখা The God Delusion বইয়ের সস্তা কথাবার্তা পড়ে ভক্তিতে গদগদ হয়ে গেছেন, তারা কয়েকজন সত্যিকারের বিজ্ঞানী এবং অ্যাকাডেমিকের লেখা পড়ে দেখুন। বুঝতে পারবেন যে, রিচার্ড ডকিন্স আসলে একজন ফার্মগেটের রাস্তার ওষুধ বিক্রেতার মতো হাস্যকর কথাবার্তা বলে মানুষকে একধরনের উত্তেজক ড্রাগ দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার মাজারের সাগরেদ, কিছু উঠতি ‘বিজ্ঞানীরা’, পলিটিশিয়ানদের সাথে হাত মিলিয়ে, তাকে একজন সেলিব্রিটি বানিয়ে ব্যাপক ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে। এদের প্ররোচনায় পড়ে লক্ষ লক্ষ বোকা মানুষ তাদের মাজারের মুরিদ হয়ে যাচ্ছে এবং ডকিন্স এবং তার মাজারের সাগরেদদের বিরাট বড়লোক বানিয়ে দিচ্ছে। যাদের ভিতরে ঈমান আনার সদিচ্ছা রয়েছে, তাদের আল্লাহকে দেখার আসলে কোনো প্রয়োজন নেই। তারা পক্ষপাতহীনভাবে, বিচার-বুদ্ধি খাটিয়ে সৃষ্টিজগতকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলেই, সেই সৃষ্টিজগতের স্রস্টার প্রতি শ্রদ্ধায় মুগ্ধ হয়ে ঈমান আনতে পারে। আর যাদের ঈমান একদম নড়বড়ে বা ঈমান আনার ইচ্ছা একেবারেই নেই, তাদেরকে অলৌকিক কিছু দেখালেও যে লাভ হয় না তার উদাহরণ এই বনি ইসরাইল জাতি, যাদেরকে নবী মুসা ভয়ংকর সব অলৌকিক ঘটনা দেখিয়েছিলেন: সমুদ্র দুইভাগ করে দেওয়া, নীল নদের পানি রক্তাক্ত করে দেওয়া, লক্ষ লক্ষ কীটপতঙ্গ এবং ব্যাঙ দিয়ে আক্রমণ; নবী সালিহ -এর জাতি: যাদেরকে একটি অলৌকিক উট দেওয়া হয়েছিল; নবী ঈসা যিনি জন্ম নিয়েই কথা বলা শুরু করেছিলেন, একদিন মৃত পাখিকে জীবিত করে দেখিয়েছিলেন; নবী ইব্রাহিম এর জাতি,যারা তাঁকে এক বিশাল আগুনে ফেলার পরেও তিনি অক্ষত অবস্থায় আগুন থেকে বের হয়ে এসেছিলেন ইত্যাদি। ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষকে সাংঘাতিক সব অলৌকিক ঘটনা দেখানো হয়েছে, কিন্তু তারপরেও অনেক মানুষ হয় বিশ্বাস করেনি, না হয় বিশ্বাস করেও কয়েকদিন পর আবার শিরকে ডুবে গেছে, শেষ পর্যন্ত নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারেনি।
0 Comments