মৃত্যুর পর যে একটি জীবন আছে সেটি আল-কুরআনে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। কুরআনে প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় সুমহান আল্লাহ এর কথা বলেছেন। এটি আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অন্যতম স্তম্ভ। কুরাইশদের মাঝে আল্লাহর রাসূল অন্যতম যে বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন তার মধ্যে এটি ছিল শীর্ষের দিকে। কুরাইশরা মৃত্যুপরবর্তী জীবন বিশ্বাস করতো না।
বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপমার সাহায্যে মানুষকে আল্লাহ এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন। কখনো কখনো যৌক্তিক প্রমাণ দিয়েছেন। বলেছেন মৃত জমিনের দিকে তাকাও। দেখো কীভাবে আমি পুনরায় একে জীবস্ত করি। শুকনো খরখরে গাছের দিকে তাকাও। দেখো কীভাবে তারা নতুন প্রাণে জেগে ওঠে। বলশালী নানা সৃষ্টি এমনকি তোমার নিজের জীবনের দিকে চোখ ফেরাও। যিনি প্রথমবার তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে আবার সৃষ্টি করতে পারবেন।
কখনো তিনি নৈতিক প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা কি মনে করো ধর্মী ও বিধর্মী সমান পুরষ্কার পাবে? সৎ ও অসৎ ব্যক্তি সমান প্রতিদান পাবে?
পৃথিবীতে কত অত্যাচারী, কত অপরাধী সাত খুন করেও পার পেয়ে যায়। চরম পাপিষ্ঠ ব্যক্তিকে দেখা যায় কী আয়েশি জীবনযাপন করছে। তারা সাধারণ নিরাপদ মানুষদেরকে নির্যাতন করছে। মেরে ফেলছে। মৃত্যুর পর যদি কোনো জীবন না থাকে, জান্নাত-জাহান্নাম না থাকে, তা হলে ওসব নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষগুলোর সাথে যে বড় অবিচার হয়ে যাবে।
কোথাও তারা কোনো সুবিচার পাবে না। কিন্তু আল্লাহ যে ন্যায়বিচারক। পূর্ণমাত্রার ন্যায়বিচারক। বিচারদিন অবশ্যই সত্য। সেদিন তিনি মানুষের ভালো কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন। আর খারাপ কাজের প্রতিফলও বুঝিয়ে দেবেন।
কুরআনে পরকাল বিষয়ক অনেক আয়াত আছে। কেউ যদি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ চান। তা হলে তা দেওয়া সম্ভব না। কোনো গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে প্রমাণ করে দেখানো যাবে না। মহান আল্লাহ কুরআনে যথেষ্ট আকল-উপযোগী উপমা-রূপক-তুলনার সাহায্যে এই ধারণাটির প্রমাণ দিয়েছেন। সবশেষে মনে রাখতে হবে এটা অদৃশ্য জগতের খবর। যিনি ‘আলিমুল গাইব, সেই অদৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর খবরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া উপায় নেই।
এই জীবনের পর যদি আর কোনো জীবন না থাকে তা হলে কী মানে আছে এ জীবনের? এতসব দুঃখ-কষ্টের? মৃত্যুর পর আরও একটি জীবন আছে বলেই আমাদের আশা আছে। জীবনটা অর্থপূর্ণ। তাওহীদ, দীনের বাণী, আল্লাহ ও রাসূলকে বিশ্বাস করার মতো পরকালে বিশ্বাস ইসলামের অন্যতম স্তম্ব।
শাইখ ড. ইয়াসির কাদি
0 Comments