Advertisement

Main Ad

উপলব্ধিহীন মানব

সবাই স্বার্থপর নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ। মানুষের উপলব্ধি বড়ই সীমিত পরিসরে কার্যকর। কোনো ঘটানার প্রামাণ্যতা কিংবা কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপট সবিস্তরে জানতে হলে ঘটানাগুলোকে কেবল ভিতর থেকেই পর্যবেক্ষন করলেই হয়না, বরং ঘটনার সুষ্পষ্টতা তখনিই আসে যখন উক্ত ঘটনাকে ফোকাসে রেখে দূর থেকে তাকে পর্যবেক্ষন করা হয়। দুনিয়া অন্বেষনকারী মানুষেরা দুনিয়া অন্বেষন করছে, আবিষ্কার করছে নতুন তথ্য কিংবা গবেষনালব্ধ ফলাফল। কেউ কখনো নিজের উপলব্ধির স্বচ্ছতা নির্ভরযোগ্য উপায়ে প্রত্যক্ষ করেনি।সবাই কেবলমাত্র কোনো ঘটনাকে ভিতর থেকেই পর্যবেক্ষন করে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ পৃথিবী থেকে যেমন সুন্দর দেখায়, চাঁদে গিয়ে সেই সৌন্দর্য উপলব্ধি করার চেষ্টা কেবল মূর্খরাই করতে পারে। মানুষ গুনগান করে শুধু সাফল্যের, ব্যর্থতার মালা কেউ গলায় দিতে সহজে চায়না। অথচ মানুষ যখন হাজারো ব্যর্থতার চারা রোপন করে, এবং সেখানে যদি দু চারটি সাফল্য উকি দেয় তখন মানুষ শুধু সাফল্যদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ব্যর্থ চারা গুলোর খোঁজ খবর আর নেওয়া হয়না। হাজারো ব্যর্থাতার মুখেও তখন গুটিকতক সাফল্য তাদের মনে প্রশান্তির ঝড় বয়ে আনে। কয়েকদিন পরেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।দেশের ভার্সিটি কোচিংগুলোতে তাকালেই দেখা যাবে তারা লিফলেট দিয়েছে,অমুক ভার্সিটি থেকে এত জন তমুক ভার্সিটি থেকে এত জন চান্স পেয়েছে আর চান্সপ্রাপ্ত সোনামুখগুলোকে রঙ বেরঙের পোষ্টারে টানিয়ে দেওয়া হবে। আর টানিয়ে দেওয়া হবে তাদের দু চারটি স্বীকারোক্তি মূলক কথা। অথচ তাদের কোচিংগুলোতেই পড়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ব্যর্থ হচ্ছে তার হিসাব রাখবে কে? নাকি ফলের সুমিষ্ট রসটুকু খেয়ে ছোবলাটা ফেলে দিতে হবে। যারা ব্যর্থ হয়েছে তাদের হিসাবটা কেউ না রাখলেও যারা সফল হয়েছে তাদের হিসাবটা ঠিকই কড়াইগন্ডায় রাখা হয়। তাদেরকেই লিফলেটে হাসিমাখা মুখে প্রদর্শন করা হয়। কোনো ভার্সিটি কোচিং গুলোতে আজ অবধি এমন দেখিনি যেখানে চান্সপ্রাপ্তদের পাশাপাশি অচান্সপ্রাপ্তদের সংখ্যাটাও দেখানো হয়। কেন দেখাবে? দেখালে তো তাদের ভন্ডামি ধরা পড়ে যাবে। যখন দেখবে ৬০০ জনে ৬০ জন চান্স পেয়ছে আর ৫৪০ জন চান্স পায়নি তখন তাদের সম্মান কোথায় উঠবে? আর মুলত যে ৬০ জন চান্স পেয়েছে তারা প্রকৃতপক্ষে চান্স পাওয়ারই যোগ্যই ছিল। কিন্তু বাকি ৫৪০ জন যারা চান্স পাওয়ার যোগ্য না তাদের কাউকে তো চান্স পাওয়াতে পারে নি। অচান্সপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করার কারনটা অজানা নয়। প্রশংসার দাবিদার সবাই হতে চাইলেও দুর্নামের ভাগিদার সহজে কেউ হতে চায় না। যেই কোচিং এ বড় অঙ্কের চান্সপ্রাপ্তদের তালিকা আছে তার অন্তরালে বড় অঙ্কের ব্যর্থদের সংখ্যাও আছে। মানুষের উপলব্ধি ক্ষমতা ক্রমে ক্রমে নিরপেক্ষ হয়ে যাচ্ছে। তালগোল পাকিয়ে লোকে চোখের সামনে যাই প্রদর্শন করে তাতেই সন্তুষ্ট। অন্তরালে কি হয়ে গেল তার গবেষনার প্রয়োজনবোধ হয়না। কারন মানুষত স্বার্থের একনিষ্ঠ প্রতিনিধি। যখন তার স্বার্থের স্বীয় সীমা পূর্ন হয়ে যায় তখন পাছে ভাবার আর কি দরকার। আমি তো ভালই আছি। আর তার অন্তরালে শত লক্ষ ব্যর্থরা নির্ঘুম ব্যাথাবহ অশেষ রাত্রিগুলো অতিবাহিত করে। কেউ তার হিসাব কখনো রাখেনি, আর রাখবেও না।শুধু কিছু রঙিন স্বপ্ন তাদের চোখের কোনেই রয়ে যায় আজীবন। কেউ তা উপলব্ধি করে না।

Post a Comment

0 Comments